বাংলা বিভাগ (স্নাতক ও স্নাতকোত্তর)

 

ঝাড়গ্রাম রাজ কলেজের বাংলা বিভাগের সূচনা হয় ১৯৪৯ সালে। সে’সময় আই.এ.এবং পি.ইউ.কোর্সের পঠন-পাঠনের মধ্য দিয়ে এই বিভাগের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১৯৫৭ সালে সাধারণ স্নাতক ও ১৯৬৯ সালে সাম্মানিক বাংলা স্নাতক কোর্সের পঠন-পাঠন শুরু হয়। ২০০৮ সালে এই বিভাগে স্নাতকোত্তর পাঠক্রমের পাঠদান শুরু হয়। দীর্ঘকাল ধরে বহু শিক্ষকের আন্তরিক শ্রম ও কর্মদক্ষতার উপর ভর করে এই বিভাগ কলেজের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছে। বর্তমানে এই বিভাগে সাম্মানিক স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তর মিলিয়ে প্রায় তিনশত শিক্ষার্থীর পড়াশোনার সুযোগ আছে। সাধারণ স্নাতক স্তরে পড়ুয়ার সংখ্যা সহস্রাধিক। বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পাঠে উৎসাহী-শিক্ষার্থীর সংখ্যা যথেষ্ট বেশি হওয়ায় অধিকাংশ আসনই পূর্ণ থাকে। এই বিভাগে সাতটি পূর্ণ সময়ের শিক্ষক পদ থাকলেও বর্তমানে মাত্র তিনজন অধ্যাপকই রয়েছেন। তবে কলেজের অন্যান্য বিভাগের অধ্যাপকেরা এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ অতিথি অধ্যাপকেরাও এই বিভাগের আমন্ত্রণে স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রায়শই বক্তৃতা দিতে আসেন। নিয়মিতভাবে এ ধরনের বক্তৃতার আয়োজন করা হয়ে থাকে।

ঝাড়গ্রাম এবং তার পার্শ্ববর্তী গ্রাম ও মফস্বল থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, যদিও তাদের মধ্যে অনেকেই যথেষ্ট মেধাবী, কৌতূহলী ও আগ্রহী। এইসব শিক্ষার্থীদের পেশাগত লক্ষ্য পূরণ করবার জন্য সচেষ্ট হয়েও বাংলা বিভাগ তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। সাহিত্যপাঠের সরল অনাবিল আনন্দ থেকে যাতে বাংলার শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত না হয় সে-দিকেও এই বিভাগের শিক্ষকেরা সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।

বাংলা বিভাগ একটি স্নাতকোত্তর বিভাগ বলেই অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের বাংলা বিভাগগুলির সঙ্গে এই বিভাগের নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রয়েছে। এর ফলে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা অন্য প্রতিষ্ঠানের বাংলা বিভাগের অধ্যাপকদের সঙ্গে কথোপকথনের সুযোগ পায়। বাংলা বিভাগের গ্রন্থাগারে ন্যূনাধিক ছয়শত বই রয়েছে। বিভাগের অধ্যাপক ও শিক্ষার্থীরা এই ক্ষুদ্র গ্রন্থাগারটি থেকে উপকৃত হতে পারেন। কলেজের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য সংশ্লিষ্ট গ্রন্থের সংখ্যা বর্তমানে পনেরো হাজারেরও বেশি যার মধ্যে বেশ কিছু বিরল ও দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থও রয়েছে। ব্যক্তিগত সংগ্রহের বইপত্র বা পত্রপত্রিকা দিয়েও বিভাগের অধ্যাপকেরা শিক্ষার্থীদের সাহায্য ক’রে থাকেন। স্নাতকোত্তর স্তরের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী অন্য কলেজের ছাত্রছাত্রীরা বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের একটি পত্রকে বিষয় হিসেবে বেছে নিয়ে এই কলেজে নিয়মিত ক্লাস করতে আসেন। পক্ষান্তরে এই কলেজের শিক্ষার্থীরা অন্য কলেজে অন্য বিষয়ের একটি পত্র পড়তে যান। এ-ধরনের আদান-প্রদানের সংস্কৃতি রয়েছে এবং এর মাধ্যমে আমাদের বাংলা বিভাগ সমৃদ্ধ হচ্ছে।

বিভাগের পড়ুয়ারা নিয়মিত নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ক’রে থাকেন এবং সেই অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। সাম্প্রতিকতম মহামারীর পূর্বে নিয়মিতভাবে দেওয়াল-পত্রিকা প্রকাশিত হতো; অদূর ভবিষ্যতে সেই দেওয়াল-পত্রিকা পুনশ্চ প্রকাশিত হবে এমন আশা রাখা যায়। বাংলা বিভাগ নিয়মিতভাবে আলোচনাচক্র, ধারাবাহিক বক্তৃতা ও বিশেষ বক্তৃতা আয়োজন করে থাকে। স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষার্থীরাও বক্তা হিসেবে আলোচনাচক্রে অংশগ্রহণ করেন।

এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা লোকসাহিত্য ও শিল্প বিষয়ে বিশেষভাবে আগ্রহী। এই অঞ্চলের লোকসংস্কৃতির সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত—বিশিষ্ট এই সংস্কৃতির তারা ধারক ও বাহক। শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে এলাকার সংস্কৃতি-চর্যাও প্রতিষ্ঠানে প্রবিষ্ট হয়। এই পারস্পরিক বিনিময়, স্থানীয় সংস্কৃতির বিশিষ্ট রূপের সঙ্গে সক্রিয় সংযোগ ও সমন্বয় আমাদের বিভাগকে বিশেষভাবে সমৃদ্ধ করে চলছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রম অনুযায়ী সাম্মানিক স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্ষেত্রসমীক্ষায় অংশ নিয়ে থাকে এবং সমীক্ষা অনুসরণে গবেষণামূলক প্রকল্পপত্র রচনা করে থাকে। বর্তমানে শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষের অপ্রতুলতার কারণে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের শিক্ষার্থীদের সকলকে তাদের পছন্দমতো বিশেষ পত্র নির্বাচনের সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না ঠিকই, তবে অদূর ভবিষ্যতে সরকারি সহায়তায় এই সীমাবদ্ধতা আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব এমন আশা করা যায়।

বিভাগের ই-মেল আই.ডি.:  jrcbangla@gmail.com